মধ্যযুগের এমন একটি সময় গেছে যখন অত্যাচারের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।সেই সময় যে ভয়ানক ও অভিনব শাস্তি অপরাধীকে দেওয়া হতো। তার নিসংসতা সম্পর্কে আমরা হয়তো ধারণাও করতে পারবোনা।সেই ক্ষেত্রে আমরা ভাগ্যবান কারণ, সেই শাস্তি তুলনায় এখনকার শাস্তি তেমন মর্মান্তিক নয়।
নিচে বর্ণিত সবগুলো শাস্তি হয়তো আপনাদের বিশ্বাস হবে না।তবে মধ্য যুগে এই শাস্তিগুলো সত্যিই মানুষের উপর প্রয়োগ করা হতো। ইতিহাস এগুলোকে নথিভূক্ত করে রেখেছে।মানুষ হিসেবে মানুষের মূল্য বিবেচনা করে আধুনিক যুগে এসে এই শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১। Judas Cradle / বেইমানের দোলনা :

মধ্য যুগে স্প্যানিশদের আবিষ্কৃত এই বর্বর পদ্ধতির শাস্তি। বন্দিকে নগ্ন করে দেহের চারপাশ দিয়ে বাঁধা হত। তারপর ঝুলিয়ে সুচের উপর বসানো হতো। বেস তারপর আর কিছু করা লাগত না। শরীরের ভারে সবকিছু একত্রিত হয়ে যেত ।
২। The Breaking Wheel / চূর্ণকরণ চাকাঃ

এটি মধ্যযুগের শাস্তির মধ্যে অন্যতম একটি শাস্তি। একটি চাকার ওপর বন্দিকে শোয়ানো হত। তারপর প্রচন্ড জোরে ভারি হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে শরীরের সব জয়েন্ট আলাদা করে ফেলত।
৩। Spanish Donkey / স্প্যানিশ গাধাঃ

মধ্যযুগীয় বর্বরতার আরেকটি নিদর্শন। এই পদ্ধতিতে বন্দিকে একটি গাধার উপর বসানো হতো কিন্তু এই গাধাটি একটি অন্যরকম তেমন নরম মোলায়ম নয়। এর ওপর খুব ধারালো এতে বসিয়ে বন্দীদের পায়ে ভারী লোহার বল ঝুলিয়ে দেওয়া হতো।
৪/ Impalment / শূলে চড়ানোঃ

এই ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলার আছে বলে, মনে হয় না। শূলে চড়ানো বলতে যা বুঝায়। বন্দীর হাত-পা বেঁধে দণ্ডের উপর বসিয়ে দেওয়া হতো। তারপর শরীরের ভারে যত সময় যেত তত গভীর হয়ে যেত। এই পদ্ধতিতে বন্দি্র মৃত্যু হতে তিন থেকে চারদিন লেগে যেত।
৫। Brazen / লোহার মহিষঃ

ফিজিতে এই পদ্ধতি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করা হয়। পিরিয়ালস নামক এক ইস্পাত কর্মী। শাস্তি দেওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়াটি ডিজাইন করেন। বিশাল বড় ইস্পাতের তৈরি একটি মহিষ। যার পিঠের উপর দিয়ে দরজা থাকতো। তারপর সেই দরজা দিয়ে বন্দিকে ঢুকানো হত। তারপর দরজায় তালা মেরে দেওয়া হত। তারপর নিচ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হত। এবং বন্দি ভিতরে বসে জীবন্ত পুড়তে থাকতো।
৬। Execution by Elephant / হাতির সাহায্যে মৃত্যুঃ

এই পদ্ধতি সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বন্ধির মাথা পাথরের উপর রাখা হতো। এবং হাতি তার বিশাল পা দিয়ে বন্দীর মাথার ওপর পাড়া দিয়ে পিষে ফেলতে। এবং এর জন্য হাতিকে আলাদা ভাবে ট্রেনিং করানো হতো।
৭। Blood Eagle / রক্ত ঈগলঃ

প্রচন্ড ভয়ানক ও নিশংস একটি পদ্ধতি। মূলত নরওয়ের জলদস্যুরা এই পদ্ধতিটা প্রয়োগ করতো। এই পদ্ধতিতে বন্দীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে, পাজরের হাড্ডি গুলো পিঠের দিক দিয়ে টেনে বের করা হয়। সেটি পাখির ডানার মতো হয়ে থাকতো। ফুসফুসের পিছন দিয়ে বের করে ফেলা হতো এবং এই ক্ষত স্থান গুলোতে লবণ ছিটানো হত।
৮। Crushing / চূর্ণ বা পিষ্ট করণঃ

পিষ্ট করা বা কোন কিছু চাপা দেওয়া ব্যাপারটি ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশি প্রচলন ছিল। সাধারণত জোরপূর্বক কোন কিছু আদায়ের এই শাস্তি দেওয়া হত । এই পদ্ধতিতে বন্দিকে মাটিতে শুইয়ে তার পিঠের ওপর বড় বড় পাথর দিয়ে চাপা দিত।
৯। Hanged, Brawn, Quartered / ঝোলানো বা টেনে রাখা ভাগ ভাগ করাঃ

মূলত ইংল্যান্ডে এই শাস্তির প্রচলন ছিল। ধারণা করা হয় এই শাস্তিটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবথেকে ভয়ানক শাস্তি ছিল। এই শাস্তি মূলত তিনটি ধাপে দেওয়া হতো। প্রথমে একটি কাঠের ফ্রেমে সাথে বেধে ঘোড়া দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো ময়দানে। তারপর গলায় দড়ি বেঁধে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এতেও যদি দোষ স্বীকার না করত, তখন তার হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে। দুই দিকে ঘোড়ার সাথে জুড়ে দেওয়া হতো। সামনে যতবেশি টান লাগতো ততবেশি ব্যাথা অনুভব হত। এরপরও বন্দী দোষ স্বীকার না করলে বন্দীর পেট কেটে জীবিত অবস্থায় পেটের নাড়ি ভুড়ি বের করত। এরপর ঝুলিয়ে গলা কেটে ফেলা হতো। তারপর তার শরীর চার ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো।
১০। The Saw Torture /করাত দিয়ে ভাগ করাঃ

এটি মূলত ইউরোপে প্রচলিত ছিল। এই শস্তি দেওয়া হত যারা সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট থাকতো। তাদের উলঙ্গ করে উল্টো করে বেঁধে, তারপরে দুই পায়ের মাঝখান থেকে বড় করাত দিয়ে কাটা হত।
উল্লেখিত শাস্তি প্রচন্ড ভয়াবহ ভাগ্য ভালো শাস্তি গুলো এখন আর নেই।
Leave a Reply